- দ্য আর্ট অফ কন্সপায়রেসি থিউরি - July 7, 2020
- লকডাউন ১ মাসের বেশি চললে অন্তত কত লোক খাদ্য সংকটে পড়তে পারে? - April 10, 2020
- আহারে ক্ষুধা! - April 9, 2020
প্রথমেই বলি জনাব ওবায়দুল কাদের সাহেবের ভিডিওটা দেখে আসতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, পাল্টা প্রশ্ন করে জিজ্ঞেস করতে চাই- এমন প্রশ্নের মটিভ কি? “তথ্য গোপন হচ্ছে না’ এটাকে ডিফেন্ড করাই কি উদ্দেশ্য নাকি এটা শুধুই জানতে উৎসুক একটা প্রশ্ন? “তথ্য গোপন হচ্ছে না’ এটাকে ডিফেন্ড করার জন্য ঠিক এই প্রশ্নটাই সরকারের লোকেরা করেছে, এবং করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের কাইন্ড অফ কনফেসও করেছেন যে-কৌশলগত কারনে গোপন করতে হচ্ছে বা হতে পারে।
১। করোনার তথ্য যে, গোপন হচ্ছে এটার বহু প্রমাণ আছে-একটা মাত্র হচ্ছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এই বছরের ফেব্রুয়ারী, কিংবা মার্চের তুলনায় মার্চের এপল টু এপল হিসেবে শ্বাসকষ্টের রোগীর তথ্য মিলে না। গত বছরের ফেব্রুয়ারির ৪৪৬০ এই বছর ২৪৯৩০ জন শ্বাসকষ্টের রোগীর ভর্তির তথ্য কোনভাবেই মিলছে না।

গত মার্চের ১ম ১৫ দিনের ৮২০ এর বিপরীতে এই মার্চের সংখ্যা ১১৯৩০।

নতুন সংক্রমণ এবং মৃত্যু না দেখালোও বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পিপিই পরিহিত অবস্থায় খুব গোপোনে কবরস্থানে লাশ দাফনের কাজ চলছে। যদি করোনা জনিত মৃত্যুই না থাকে তাইলে ঢাকার বিভিন্ন কবরস্থানে এমন সুরক্ষা এবং এমন গোপনীতার আয়োজন কেন?
২। নো টেস্ট, নো করোনা। “টেস্ট করবো না, প্রমাণিতও হবে না” এই ধ্বংসাত্মক আত্মঘাতী নীতি নিয়েছে তারা, যেহেতু করোনা টেস্টেড নয়, প্রমাণিত নয়- তাই মিডিয়া রিপোর্টও করা যাবে না। এদিকে করোনা বা এর মত সিম্পটম থাকা রোগীদের কোন হাসপাতালই ভর্তি নিচ্ছে না, সরকারি ভয়ে, সংক্রমণের ভয়ে, প্রটেক্টিভ পিপিই না থাকার ভয়ে। আচ্ছা, সাধারণ মানুষের কি সম্মানজনক মৃত্যুরও অধিকার দিবে না এই রাষ্ট্র?

৩। সংক্রমাণ রোগ টেস্টের আগের বিধবদ্ধ মেথড হঠাত বন্ধ করে দিয়ে ক্যাপাসিটিহীন একটা হট লাইন চালু করে রোগী ও তার পরিবারকে ঘন্টার পর ঘন্টা হয়রানি করছে। IEDCR হটলাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে অসুস্থ মানুষের সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমন মানুষিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে মরার আগেই মরে যাচ্ছেন। আই ই ডি সি আর হটলাইনে ৮ লাখের বেশি কল এসেছে গত পাচ-ছয় দিনে অথচ পরীক্ষা মাত্র ১০৭৪ জনের!_
৪। একই সাথে তারা সংক্রমণের যে তথ্য দিচ্ছে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু এবং ভাইরোলজি স্ট্যাটিস্টিকে, পার্শ্ববর্তি দেশের রেইট এবং সিমুলেশান মডেল সব গুলাতেই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।


৫। এর বাইরে সে আরেকটা ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে, লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের বিশ্ব বিখ্যাত ভারোলজি সিমুলেশান মডেলে গবেষণা করা বাংলাদেশের দুই রিসার্চারকে শোকজ করেছে। আর সর্দি কাশি শ্বাসকষ্টে এত লোক মারা যাচ্ছে তার আগের বছরের সংখ্যা এবং স্বাভাবিক গ্রোথ দিয়ে হিসেব মিলানো যাচ্ছে না। ফলে তথ্য লুকানো হচ্ছে না এমন বিশ্বাস স্রেফ সরকারকে হার্ড কোর সমর্থনের বিষয় ছাড়া অন্য কিছুই হতে পারেনা।

৬। করোনার প্রকোপে বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশেও উদ্ভব হয়েছে হ্যান্ড ওয়াশ আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের নজিরবিহীন সঙ্কটময় পরিস্থিতি। ত্বরিৎ সিদ্ধান্তে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন শুরু করেছিলো বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাহিদ আলী আনছারীর তত্ত্বাবধানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ২৩ মার্চ থেকে বাজারজাত শুরু করা এ হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ৯৯.৯৯ শতাংশ জীবাণু নষ্ট হবে বলে জানিয়েছিলেন কেরুর রসায়নবিদরা। কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ নামে এ পণ্য বাজারেও সাড়া ফেলেছে।

কিন্তু অদ্ভুত এক কারনে জাহিদ আলী আনছারীকে গত ২৪ মার্চ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চীফস অব পার্সোনাল মো.রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তাকে ইক্ষু উন্নয়ন ও গবেষণা পরিদফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
৭। আইইডিসিআর ছাড়াও আইসিডিডিআরবি, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল, পিজি হাসপাতাল, বারডেম, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের Reverse transcription polymerase chain reaction (rt PCR) রয়েছে, আইসিডিডিআরবি তৈরিও ছিল কিন্তু তাদের পরীক্ষা করতে দেয়া হল না, অথচ চিকিৎসা সেবায় বাংলাদেশের এই প্রতিষ্ঠানের সম্মান বিশ্ববিদিত।

আইইডিআর ছাড়াও আইসিডিডিআরবি, চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট, বিআইটিআইডি, ডিজডিএ, নিপসম, আইপিএইচ, বিএমআরআই এ উন্নতমানের গবেষণাগার আছে।
রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণার দায়িত্বরত ইনস্টিটিউট পরিণত হয়েছে “রোগ ধামাচাপা, সংক্রমণ বিস্তার ও তথ্য ষড়যন্ত্র গবেষণা” করার কৌশলী প্রতিষ্ঠান। এ যেন, আরেকটা নির্বাচন কমিশন, মানুষের প্রাণ নিয়ে ইঁদুর বিড়াল খেলাই যাদের প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে। অথচ প্রতিজন অপরিক্ষিত করোনা রোগীর মৃত্যু এক একটা পুরো এলাকাকে সংক্রমনের কেন্দ্র বানিয়ে দিতে পারে। মীরজাদি ম্যাডামের উচিৎ ছিল ব্রাক, নর্থ সাউথ, জন হপকিন্সন ও লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের সিমুলেশান মডেল সরকারকে বুঝিয়ে যথাযথ প্রস্তুতির একমুখী পরামর্শ নেয়ার দায়িত্ব নেয়া।
এখন অর্থনৈতিক ব্যাপারে আসি,
করোনা এমন একটা নাজুক বিষয় যার তথ্য লুকিয়ে সরকারের লাভের কোন সুযোগ নেই। বরং সরকার সময় পেয়েও প্রস্তুতি নেয়নি, মুজিব বর্ষ উদযাপন নিয়ে ব্যস্ত ছিল এবং সরকার করোনার প্রভাবকে হাল্কা বলে উড়িয়ে দিয়ে আলতু ফালতু বহু কথা বলেছে এবং প্রায় দুমাস সময় নষ্ট করেছে।

পাশাপাশি আসলে তার হাতে টাকা নেই। তাঁকে করোনা চিকিৎসা ও লকডাউনের কারনে সৃষ্ট খাদ্য সংকটের আর্থিক দায়িত্ব নিতে হলে ব্যাপক টাকা লাগবে, যা তার হাতে নেই।
সরকারের কাছে ডলার আছে, প্রায় পুরা বিশ্ব লকডাউন কিংবা ইমার্জেন্সিতে, ফলে কিনে এনেই যে কিছু করে ফলেবে তার সময়ও এটা না, শুধু কুটনৈতিক চ্যানেলে কিছু কাজ হতে পারে।
এখন যেহেতু সরকার আর্থিক সংকটে, অর্থাৎ নগদ টাকার
জোগান কম, কারণ সে আগেই পুরা বছরের টার্গেট ব্যাংক ঋণ করে খেয়ে ফেলেছে, আবার রাজস্ব আয়ও ৩৭
হাজার কোটি কম হয়েছে টার্গেট থেকে। ফলে এখন তার উপায় কম, তাঁকে বার্ষিক
উন্নয়ন বাজেট বা এডিপি কাটছাট করে ছোট করে টাকার সংস্থান করতে হবে। এদিকে এডিপি কাটছাট করতে গেলে
কর্তিত্ববাদী জবাবদিহিতাহীন ভোটবিহীন সরকার দুর্নীতি, পুকুর চুরি এবং বেপারোয়া লুটপাটের
যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আমলাতান্ত্রিক পকেট গুলো তৈরি করেছে সেগুলো ক্ষেপে উঠবে।
তাই সে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাহীনতায় আছে, এবং এই সময়ে
ব্লাইন্ড খেলছে।
সত্যি বলতে কি এই খেলায় সরকারের কোন লাভ নেই, শুধু লোকসান আর লোকসান। তথ্য লুকানোর প্রতিটি চেষ্টা সরকারের সামনে নতুন সমস্যার একটা চক্রই বরং খুলে দিচ্ছে। বরং দরকার ছিল করোনা বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব এটা বলে, চাপ কমিয়ে নাগরিকের চিকিৎসা ও খাদ্য জোগানের তাৎক্ষণিক দায়িত্ব নেয়া।এতে করে নাগরিক সরকারের আন্তরিকতাকে আস্থায় নিয়ে সরকারের যে কন উদ্যোগে সহযোগীতা করতে এগিয়ে আসতো। এখন তার নেই কাজ, নেই আহার, আছে বন্ধী কিন্তু তাঁকে শুনতে হচ্ছে অনর্গল মিথ্যা এবং সইতে হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে প্রান্তিক জনতা পাচ্ছে নাগরিক মর্যাদাহীন ব্যবহার এবং অপমান কর শাস্তি।

তথ্য লুকানোর আরো প্রমাণ দিব?
যেহেতু সরকারের ডেটা অনুসারে নতুন সংক্রমণ নেই গত দু দিন, তাই লক ডাউন তুলে নিবার ডিক্লারেশান নিয়ে আলোচনা হবার কথা, সম্ভাব্য ডেট আসার কথা! এমন কিছু শুনা যাচ্ছে? নাকি চারদিক থেকে সর্দি কাশি শ্বাসকষ্টে হয়রানি বা মৃতের খবর আসছে?


16,178 total views, 2 views today